সাবুদানা ডোসা (sabudana dosa recipe ), দক্ষিণ ভারতের প্রাচীন রেসিপির (south indian recipe) মধ্যে জনপ্রিয়  একটি, যা শুধু সুস্বাদু নয়, পুষ্টিতেও ভরপুর। এটি তৈরি করতে খুব কম উপকরণ লাগে এবং রান্নাও বেশ সহজ। সকালের বা সন্ধ্যার হালকা স্ন্যাকস হিসেবে এটি গ্ৰহনযোগ্য। সাবুদানা, চালের গুঁড়া, মুসুর ডাল আর কিছু সাধারণ মশলা মিশিয়ে অতি সহজে  বানানো হয়, যা আপনাকে দেয় এক নতুন স্বাদের অভিজ্ঞতা। সাবুদানা  নরম এবং হালকা হওয়ার কারণে  দারুণ সুস্বাদু করে তোলে। তাছাড়া, এটি একদম হালকা এবং সহজে হজম হয়, এমনকি যাদের ওজন কমানোর  জন্যও এটি একটি আদর্শ বিকল্প হতে পারে। সব মিলিয়ে, এই রেসিপি বাড়ির সবার জন্য উপভোগ্য হবে এবং আপনি একবার বানালে বারবার খেতে চাইবেন।

সাবুদানা ডোসা, দক্ষিণ ভারতের এক চমৎকার এবং সুস্বাদু খাবার, যা সহজেই আপনার রান্নাঘরে তৈরি  করতে পারবেন। এটি এমন একটি রেসিপি প্রক্রিয়া যা স্বাদে একেবারে আলাদা। সাবুদানা, মুসুর ডাল, চালের গুঁড়ো এবং কিছু মশলা মিশিয়ে তৈরি এই ডোসা, প্রতিটি কামড়ে এনে দেয় এক নতুন অভিজ্ঞতা। হালকা এবং পুষ্টিকর হওয়ায় এটি  স্ন্যাকস হিসেবে পারফেক্ট। একবার ট্রাই করে দেখুন, আর আপনিও এর প্রতি আসক্তি হবেন।

উপকরণ এবং পরিমাণ:

1. সাবুদানা  ১ কাপ

2. চালের গুঁড়া   ১/২ কাপ

3. মুসুর ডাল   ১/৪ কাপ

4. পেঁয়াজ (কুচি)   ১/২ কাপ

5. সবুজ মরিচ (কুচি)   ২টি

6. জিরে   ১/২ চা চামচ

7. হলুদ   ১/৪ চা চামচ

8. কালো মেথি   ১/৪ চা চামচ

9. আদা (কুচি)  ১ টেবিল চামচ

10. ধনে পাতা (কুচি)  ১/৪ কাপ

11.লবণ  স্বাদ অনুযায়ী

12. তেল   প্রয়োজন মতো (ভাজতে)

এখানে ৩ ৪ জনকে পরিবেশন করা যাবে,আপনি চাইলে প্রয়োজন মত পরিমাণ বাড়াতে পারেন।

সাবুদানা ডোসা বানানোর প্রক্রিয়া

1. সাবুদানা ভিজিয়ে রাখা:
প্রথমে, সাবুদানা একটি বড় পাত্রে ২ ৩ ঘণ্টা গরম  জলে ভিজিয়ে রাখুন। সাবুদানাগুলি নরম ও ফুলে উঠলে পরবর্তী প্রক্রিয়াতে অগ্ৰসর হওয়া যাবে।

2. মুসুর ডাল এবং চালের গুঁড়ো পেস্ট করা:
মুসুর ডাল এবং চালের গুঁড়ো একসঙ্গে মিশিয়ে প্রয়োজন মতো জল দিয়ে একটি মসৃণ পেস্ট তৈরি করুন। পেস্টটি একটু ঘন হতে হবে।

3. মিশ্রণ তৈরি করা:
ভিজানো সাবুদানা, পেঁয়াজ কুচি, কাচা ল্ংকা কুচি, আদা কুচি, ধনে পাতা, জিরে, হলুদ, কালো মেথি এবং স্বাদ অনুযায়ী লবণ পেস্টের সঙ্গে ভাল করে মিশিয়ে নিন।

4. প্যানে তেল গরম করা:
একটি নন স্টিক প্যানে মাঝারি আঁচে তেল গরম করুন।

5. ডোসা তৈরি করা:
গরম তেলে ১ ২ টেবিল চামচ মিশ্রণ দিন এবং স্প্যাটুলা বা চামচ দিয়ে গোল আকারে ছড়িয়ে দিন। ডোসার পাশগুলি সোনালি হয়ে আসা পর্যন্ত ২ ৩ মিনিট ভাজুন।

6. উল্টে ভাজা:
ডোসাটি উল্টে দিন এবং অন্যপাশটি আরও ২ ৩ মিনিট ভেজে সোনালি রং হওয়া পর্যন্ত ভাজতে থাকুন।

7.পরিবেশন করা:

প্রস্তুত সাবুদানা ডোসাটি গরম গরম পরিবেশন করুন পছন্দসই চাটনি বা সসের সঙ্গে।

এভাবে, সুস্বাদু সাবুদানা ডোসা তৈরি হয়ে যাবে, যাদের এই খাবারটি পরিবেশন করবেন  তারা আপনার প্রশংসা  করবেই  এবং  এর স্বাদ আপনাকে মুগ্ধ করবেই ।

সঠিকভাবে তৈরি করার জন্য কিছু টিপস ও  সাজেশন :

1. সাবুদানা ভালভাবে ভিজিয়ে রাখুন:

সাবুদানা ভিজিয়ে রাখার সময় খেয়াল রাখুন, যেন সেগুলি পুরোপুরি ফুলে যায়। যদি খুব বেশি জল ব্যবহার করেন, তবে ডোসা পাতলা হয়ে যাবে। তাই পরিমাণ মতো জল ব্যবহার করুন।

2. চালের গুঁড়া ও মুসুর ডালের পেস্ট ঠিকমতো তৈরি করুন:

পেস্ট খুব বেশি ঘন না হয় সেদিকে নজর রাখুন, যাতে  তৈরি করতে সুবিধা হয়। পেস্টটিতে খুব বেশি জল না দিলে, ডোসা সুন্দর ও ক্রিপসি হবে।

3. প্যানে তেল সঠিকভাবে গরম করুন:

প্যানে তেল গরম করা খুব গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তেল প্রয়োজনমতো গরম না হলে   ভাজা ভালো  হবে না। তেল গরম হলে ডোসাটি সুন্দরভাবে সোনালি হয়ে উঠবে।

4. মিশ্রণ ভালোভাবে মেশান:

সমস্ত উপকরণ একসাথে মিশিয়ে নেওয়ার পর খেয়াল রাখুন যেন সাবুদানা মিশ্রণের মধ্যে ভালোভাবে ছড়িয়ে থাকে। কোনও জায়গায় সাবুদানা একত্রিত হয়ে গেলে ডোসা ঠিকভাবে তৈরি হবে না।

5. সাবধানে উল্টানো:

ডোসা উল্টানোর সময় খুব সাবধানে উল্টান, কারণ সাবুদানা ডোসা একটু নরম হতে পারে। সঠিক সময়ে ও সঠিকভাবে উল্টালে ডোসা ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।

6. প্লেট গরম রাখুন:

ডোসা তৈরি হওয়ার পরে, প্লেটটি গরম রাখলে ডোসা ঠাণ্ডা হবে না এবং আরও সুস্বাদু থাকবে।

7. স্বাদ অনুযায়ী মশলা যোগ করুন:

আপনার স্বাদ অনুযায়ী ডোসাতে অতিরিক্ত মশলা যোগ করতে পারেন। যেমন, আপনি যদি একটু বেশি ঝাল পছন্দ করেন, তবে আরও বেশি কাঁচা লঙ্কা বা মশলা যোগ করতে পারেন।

এই টিপসগুলো অনুসরণ করলে রেসিপিটি হবে সুন্দর, সুস্বাদু !

 পাশাপাশি কিছু  খাবারের  সঙ্গে  পরিবেশন  করলে এর স্বাদ বেড়ে যাই দ্বিগুন : 

1. চাটনি দিয়ে পরিবেশন করুন:

সাবুদানা ডোসার সঙ্গে সাধারণত গ্রিন চাটনি (ধনে পাতা, পুদিনা, লেবুর রস, কাঁচা লঙ্কা) বা নারিকেল চাটনি বেশ জনপ্রিয়। এই চাটনিগুলি ডোসার স্বাদকে আরও বাড়িয়ে তোলে।

2. সাম্বার সহ পরিবেশন করুন:

দক্ষিণ ভারতীয় ঐতিহ্য অনুযায়ী, সাবুদানা ডোসার সঙ্গে সাম্বার (মসুর ডাল দিয়ে তৈরি এক ধরণের স্যুপ) পরিবেশন করা খুব ভালো। সাম্বারের মসলাযুক্ত স্বাদ ডোসার সঙ্গে খুব ভালোভাবে ম্যাচ করে ।

3. দই বা রায়তা:

ডোসার সঙ্গে দই বা রায়তা পরিবেশন করা অনেকেই পছন্দ করেন। এটি ডোসাকে আরও মসৃণ ও সোজাসুজি করে তোলে এবং গরমের দিনে বিশেষ উপকারী।

4. স্ন্যাকস হিসেবে পরিবেশন:

সাবুদানা ডোসা একটি চমৎকার স্ন্যাকস হতে পারে। বিশেষ করে সকালের বা বিকেলের হালকা খাবার  হিসেবে এটি খুব উপযোগী। কিছু তাজা ফল বা হালকা স্যালাডের সঙ্গে পরিবেশন করলে খাবার আরও স্বাস্থ্যকর হবে।

5. পানি বা লস্যি:

ডোসার সাথে পানীয় হিসেবে ঠান্ডা পানি, লস্যি বা কিছু ফলের রস বেশ মানানসই। এটি খাবারের তাপমাত্রা কমিয়ে শরীরকে ঠাণ্ডা রাখবে।

6. হালকা স্ন্যাকস বা পার্টি ফুড হিসেবে পরিবেশন:

ডোসা ছোট ছোট করে কেটে পার্টি বা হালকা স্ন্যাকস হিসেবে পরিবেশন করতে পারেন। এটি অতিথিদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে। এই টিপসগুলো অনুসরণ করলে, আপনার সাবুদানা ডোসা পরিবেশন হবে আরও বিশেষ এবং সবার পছন্দ হবে।

  সাবুদানা ডোসা সম্পর্কিত কিছু সাধারণ প্রশ্ন (FAQs): 

1. সাবুদানা ডোসা কেন ভাজতে সময় নরম হয়ে যায়?

সাবুদানা ভিজিয়ে রাখার সময় যদি অতিরিক্ত জল  ব্যবহৃত হয়, তাহলে ডোসা নরম হতে পারে। সাবুদানার পরিমাণ এবং জল পরিমান মতো  রেখে ভিজিয়ে রাখুন।

2. আমি যদি গ্লুটেন ফ্রি ডায়েট অনুসরণ করি, সাবুদানা ডোসা কি আমার জন্য উপযুক্ত?

হ্যাঁ, সাবুদানা গ্লুটেন মুক্ত হওয়ায় এটি গ্লুটেন ফ্রি ডায়েট অনুসরণকারীদের জন্য আদর্শ।

3. ডোসাটি আরো crispy (ক্রিস্পি) কিভাবে বানানো যাবে?

ডোসা পাতলা এবং সঠিক তাপে ভাজলে সেটি আরো ক্রিস্পি হবে। প্যানটি ভালোভাবে গরম করুন এবং তেলে অল্প পরিমাণে ডোসা ছড়িয়ে দিন।

4. ডোসার মিশ্রণ আগে তৈরি করে রেখে সার্ভ করতে পারি?

হ্যাঁ, আপনি ডোসার মিশ্রণ আগে তৈরি করে রেখে ফ্রিজে ১-২ ঘণ্টা রাখতে পারেন, তবে ভিজানো সাবুদানা তাজা রাখা ভালো।

5. এটি কি ভেজিটেরিয়ান?

হ্যাঁ, সাবুদানা ডোসা সম্পূর্ণ ভেজিটেরিয়ান, এতে কোন মাংস বা মাছ নেই।

6. সাবুদানা ডোসা তৈরির সময় মুসুর ডাল কি না ও ব্যবহার করা যাবে?

মুসুর ডাল আপনার ডোসা মিশ্রণে প্রোটিন যোগ করে, তবে আপনি যদি না ব্যবহার করতে চান, তবে চালের গুঁড়া দিয়ে তৈরি করতে পারেন, তবে তেমনটা ডোসার স্বাদ ও টেক্সচার আলাদা হতে পারে।

7. সাবুদানা ডোসা কীভাবে আরও পুষ্টিকর করা যায়?

আপনি মিশ্রণে কিছু শাক সবজি যেমন গাজর, পালং শাক বা সিমলা মরিচ মিশিয়ে সাবুদানা ডোসা আরো পুষ্টিকর করে তুলতে পারেন।

8. সাবুদানা ডোসা কতক্ষণ তাজা থাকে?

সাবুদানা ডোসা তৈরি হওয়ার পর ৩০-৪০ মিনিটের মধ্যে সেরা স্বাদ পাওয়া যায়। এর পর এটি কিছুটা নরম হয়ে যেতে পারে, তাই তাজা পরিবেশন করার চেষ্টা করুন।